সংবাদ শিরোনাম :
মুন্সীগঞ্জে পুলিশ লাইন্সে বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষা প্যারেড অনুষ্ঠিত সিরাজদিখানে বালুচর থানা পুলিশ এর আয়োজনে মতবিনিময় সভা তথ্য গোপনে এফিডেভিড করে বাল্যবিবাহ দেওয়ায় মেয়ের বাবাসহ ২ জনের কারাদণ্ড মুন্সীগঞ্জে আন্ত:জেলা ডাকাত চক্রের ৮ সদস্য অভিযানে গ্রেপ্তার কালবেলা’র দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে সাংবাদিকদের মিলনমেলা মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়ার সহ-সভাপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ নাচোলে অভিযোগের ২ঘন্টার মধ্যে আসামী গ্রেফতার মুন্সিগঞ্জে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক এবং বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী । সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার ও লুট হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার দাবীতে সমাবেশ শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই হবে শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু
শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি প্রকাশ্যে এলেন, নানা আলোচনা

শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি প্রকাশ্যে এলেন, নানা আলোচনা

আসিফ হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কমিটি আছে এবং সেই কমিটির সভাপতি সাদিক কায়েম—সেটা অবশেষে প্রকাশ্যে এল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে গতকাল শনিবার মতবিনিময় সভায় যোগ দেওয়ার পর গণমাধ্যমে নিজের পরিচয় প্রকাশ করে বক্তব্য দেন সাদিক। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে।

কেউ কেউ সাদিকের সঙ্গে পরিচয় থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় না জানা ও বুঝতে না পারা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগ জানান।

কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রশাসনের মিথস্ক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম পরিবেশ পরিষদে ১৯৯০ সালে শিবির ও জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে না দেওয়ার বিষয়ে মতৈক্য হয়েছিল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হয়। তাদের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ করত। ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে শিবিরকে কোনো কার্যক্রম চালাতে দেয়নি। শিবির সন্দেহে তারা অনেককে মারধর ও হল ছাড়তে বাধ্য করেছে। অবশ্য সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাইয়ে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শনিবার আলোচনার প্রথম পর্বে অংশ নেন শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক। এই পর্বে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের নেতারা।

মতবিনিময় সভায় শিবিরের পক্ষ থেকে উপাচার্যের কাছে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পরিবর্তে সংস্কার ও অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করা হয়।

সভা শেষে সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নয়। তাঁরা সব ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে সংলাপের আয়োজন করতে বলেছেন, যেখানে ফ্যাসিবাদের দোসর ছাড়া সব ছাত্রসংগঠন আসবে। শিবির মেধাভিত্তিক রাজনীতি চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকে প্রত্যেকের রাজনৈতিক চর্চা করবে, সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, কারও ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না, সেটাই আমাদের চাওয়া।’

ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠনকে ফ্যাসিবাদের দোসর উল্লেখ করে সাদিক বলেন, তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই ।

সাদিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তাঁর স্নাতকোত্তর শেষ। তিনি থাকতেন মাস্টারদা সূর্য সেন হলে। গত জানুয়ারিতে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হওয়ার আগে তিনি সংগঠনের সূর্য সেন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

সাদিকের সঙ্গে শনিবার মতবিনিময় সভায় শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরেক নেতা রেজাউল ইসলাম অংশ নেন। তবে রেজাউলের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি। সাদিক ও রেজাউল ছাড়া শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্য নেতাদের কারও পরিচয় এখনো সামনে আসেনি।

কমিটির বিষয়ে সাদিক আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের কমিটি খুব দ্রুত প্রকাশ করা হবে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী সরকার তাঁদের আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিকস (গোপনে রাজনীতি) করতে বাধ্য করেছে।

সাদিক কায়েম গতকাল শনিবার এই ফেসবুক পোস্টে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালনের কথা জানানসাদিক কায়েমের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

ছাত্রলীগ বিতাড়িত হওয়ার পর এখন শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ব্যানারে রাজনীতি করছে এবং হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে—কারও কারও এমন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাদিক বলেন, শিবিরের সমর্থকদের বেশির ভাগ হলের বাইরে থাকেন। কিছু নিয়মিত শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারেন। গোপনে শিবির সব নিয়ন্ত্রণ করছে, এটা ঠিক নয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবারের সভাটি পরিবেশ পরিষদের ব্যানারে ডাকা হয়নি। শিবিরের দুজন নেতা সভাটিতে অংশ নেওয়ার পর এ নিয়ে উপাচার্যের সামনে প্রশ্ন তোলেন কয়েকটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ শনিবারের মতবিনিময় সভায় উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি কীভাবে তাঁকে (শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি) খুঁজে পেলেন?’

উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান তাঁর এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন মাঈন আহমেদ। মাঈন ছাড়াও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ (বাসদ) কয়েকটি বাম ছাত্রসংগঠনের নেতারা সভায় শিবিরের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

১৯৯০ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদে জাতীয় ছাত্রসমাজ ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, তখন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন। তিনি আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, স্বৈরাচারের সহযোগী হওয়ায় জাতীয় ছাত্রসমাজ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সব ছাত্রসংগঠনের মধ্যে তখন ঐকমত্য হয়েছিল। সিদ্ধান্তটি ছিল, এই দুই সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না৷

খায়রুল কবির আরও বলেন, ‘শিবির ও ছাত্রসমাজের বিষয়ে এখনকার ছাত্রসংগঠনগুলো কী আচরণ করবে, সে ব্যাপারে আমরা এখনকার ছাত্রসমাজের ওপরই আস্থা রাখতে চাই। আমরা দলীয় বা সাংগঠনিকভাবে এ বিষয়ে কিছু বলছি না৷’

 

সুত্র ঃ

দৈনিক প্রথম আলো

Facebook Comments Box





© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ দৈনিক নাগরিক বাণী